তারাবির নামাজের বিধান রমজান মাসে এশার নামাযের পর তারাবী নামায পড়া পুরুষ মহিলা সকলের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। (তবে পুরুষ মসজিদে জামাতের সাথে আর মহিলাগন ঘরে পড়বে।) কেননা খোলাফায়ে রাশেদীন (বিশেষ করে উমর রা: এর খেলাফতের শেষ জামানা থেকে) মুয়াযাবাত তথা নিয়মিত তারাবী নামায পড়তেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, তোমরা আমার সুন্নত এবং সঠিক পথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতকে দৃঢ়তার সাথে আকড়ে ধর। (আবু দাউদ:৪৬০৭, তিরমিজী,২৬৭৬,) প্রমাণ: ফাতওয়ায়ে ফাতওয়া শামী: ২য় খন্ড,৪৯৩ পৃষ্ঠা, দেওবন্দ প্রকাশনী) হাম্বলী মাযহাবের গ্রহণযোগ্যগ্রন্থ আলমুগনীতে (ইবনে কুদামা রচিত) উল্লেখ রয়েছে যে, তারাবীর নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা, আর সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামায পড়েছেন। তবে উমর (রা:) এর দিকে যে তারাবীর নামাযকে সম্পর্কিত করা হয় তার মর্ম হলো এই যে, হযরত উমর রা: সাহাবায়ে কেরামের সর্ব সম্মত রায় অনুযায়ী জামাতের সাথে নিয়মতান্ত্রিক তারাবী নামায পড়ার বিধানের প্রচলন করেছেন। নতুবা মূল তারাবীর সূচনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই হয়েছে। (আল মুগনী ১ম খন্ড, ৮৩৩ ও ৮৩৪ পৃষ্ঠা) হানাফী মাযহাবের কিতাব গুনয়াতুল মুস্তামলিতে রয়েছে যে, তারাবী নামায সুন্নত হওয়াকে যে অস্বীকার করবে অথবা অবৈধ মনে করবে সে বিদআত এর আবিস্কারক , পথ ভ্রষ্ট এবং তার সাক্ষী প্রত্যাক্ষাত হবে। আর তাহতাবী কিতাবে রয়েছে যে তারাবী নামায সুন্নত, এই নামায বর্জন ও ছেড়ে দেওয়া জায়েয নাই।(কামুসুল ফিকহ: ২য় খন্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা) আরেকটি বিষয় হলো জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়া। এব্যপারে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন: জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়া সুন্নতে কেফায়া। কোন মহল্লায় যদি কেউ-ই জামাতের সাথে না পড়ে তাহলে সকলেই গুনাগার হবে। আর যদি কিছু লোক মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করে আর কেউ কেউ ঘরে একা একা আদায় করে তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে একথা অবশ্যই স্বরণ রাখতে হবে যে, যারা একা একা পড়ল তারা জামাতে পড়ার সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হল। (কামুসল ফিকহ: ২য় খন্ড, ৪৫০ পৃষ্ঠা) উল্লেখ যে পবিত্র রমজান মাসে তারাবীর নামাযে একবার কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নত। দুই বার খতম করা ফজিলত বা উত্তম। আর তিনবার খতম করা আফজাল বা অতিউত্তম। (রাদ্দুল মুহতার : ২য় খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা, ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ ৪র্থ খন্ড, ২৭৪ পৃষ্ঠা) তারাবীর গুরুত্ব ফযীলত ও রাকাত সংখ্যা পবিত্র রমজান মাস খায়ের ও বরকতের বসন্তকাল। রমজানের দিনে রোযা রাখাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র যবানে রাতের “কিয়াম” যাকে কিয়ামে রমযান বা তারাবী বলে, সুন্নত বানিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: من قام رمضان ايمانا و احتسابا غفرله ماتقدم من ذنبه অনুবাদ: যে ব্যক্তি ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পরকালীন প্রতিদান কামনায় রমযান মাসের রাতে কিয়াম করবে(তারাবী পড়বে ইমাম নববী রহ: মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন) তার অতীত জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখরী শরীফ ও মুসলিম) তবে বিভিন্ন জনমতের কারণে তারাবীর নামাযকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাই রাখা হয়েছে, ফরজ করা হয়নি, কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে রমযানের উপকারিতা ও খায়ের বরকত পূর্ণরূপে লাভ করতে হলে তারাবী নামায পড়া জরুরী। তারাবী নামায পড়ার দ্বারা রমযান ও কুরআনের হক আদায় হবে, রোযার উদ্দেশ্য তাকওয়া হাসিলে সাহায্য পাওয়া যাবে,আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও মাগফিরাত, সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে। তাই আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের জন্য উচিৎ তারাবীর প্রতি উদগ্রীব হয়ে থাকে । তারাবীর গুরুত্ব এ থেকে ও সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, সুন্নত ও নফলের সাধারণ নিয়মে জামাআত নিষিদ্ধ, অথচ তারাবী নামাযের জামাআত বিধিবদ্দ হয়েছে। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জামাআতের ব্যবস্থা এজন্যই করেননি যে, তা আবার উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যায় কি না। এ থেকে বোঝা যায়, তারাবীর মাকাম -মর্যাদা সাধারণ নফল নামায থেকে অনেক উর্দ্ধে। মোট কথা অনেক দলীলের ভিত্তিতে ফকীহগণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, তারাবীর নামায অন্য সব নফলের মত নয়, বরং এটা না পড়লে গুনাহ হবে। এর বিপক্ষের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় প্রভাবান্নিত হয়ে নিজেকে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। রমযানের রাতগুলোকে মহাসুযোগ মনে করে গুরুত্বের সাথে তারাবীর নামাযে যত্নবান থাকুন এবং শেষ রাতে ” তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যপারে (যা সারা বছরের নামায) যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করুন।
0 Comments